,

ঈশ্বরদীতে এক মাসে অন্তত ১০০টি বিয়ে বিচ্ছেদ

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীতে সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বিয়ে বিচ্ছেদ। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কোনো না কোনো পরিবারে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কখনো স্বামী, আবার কখনো স্ত্রীর ইচ্ছেতে ঘটছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। গত এক মাসে প্রায় ১০০টি বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে আসা নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার পর আর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইছেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দাম্পত্য কলহ, স্বামী বা স্ত্রীর পরকীয়া, স্বামীর মাদকাসক্ততার মতো বিষয়গুলোও সংসার ভাঙার অন্যতম কারণ। ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়ন পরিষদ, বিভিন্ন নিকাহ রেজিস্ট্রার ও আইনজীবীর মাধ্যমে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ঈশ্বরদীর অন্তত ১০০টি পরিবারে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। আরও অর্ধশতাধিক নারী তাদের স্বামীকে তালাক দেওয়ার জন্য বিভিন্ন নিকাহ রেজিস্ট্রার ও আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত আবেদন করেছেন।

বিয়ে বিচ্ছেদ সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঈশ্বরদী ইপিজেড এলাকার পাকশী ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায়। পাকশী ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, এই ইউনিয়নে এ বছরই সবচেয়ে বেশি বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর যেখানে এ ইউনিয়নে ছয়টি বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছিল, সেখানে এ বছরে মাত্র এক মাসে ১৪ জনের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে।

পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চলতি বছর বিয়ে বিচ্ছেদের সালিশ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নে ৭, মুলাডুলি ইউনিয়নে ১১, সলিমপুর ইউনিয়নে ৮, দাশুড়িয়া ইউনিয়নে ৭, লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে ৫, সাহাপুর ইউনিয়নে ৮, পাকশী ইউনিয়নে ১৪ ও ঈশ্বরদী পৌর এলাকায় ৩৫ পরিবারসহ অন্তত ১০০টি পরিবারে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে জেলা জজ আদালতের শিক্ষানবিশ আইনজীবী আলী আজম জানান, ঈশ্বরদীর ওইসব ইউনিয়ন থেকে বিয়ে বিচ্ছেদের আরও অর্ধশতাধিক আবেদন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মিজানুর রহমান খোকন জানান, তালাক দেওয়া নারীদের প্রায় সবাই ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা বিভিন্নভাবে স্বামীর নির্যাতনের শিকার অথবা দাম্পত্য কলহের কারণে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন।

ঈশ্বরদী পৌর এলাকার সাঁড়াগোপালপুরে বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিচারে উপস্থিত থাকা সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আগের চেয়ে নারীরা এখন অনেক সাহসী, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। আয়-রোজগার করেও তারা এখন স্বাবলম্বী। এসব কারণে নারীরা আর ভয় পান না। এগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।

ঈশ্বরদী পৌরসভার প্যানেল মেয়র (২) ও সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ইপিজেডসহ এ অঞ্চলে নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় আগের দিনের মতো কেউ আর মুখ বুজে সবকিছু সহ্য করছেন না। দাম্পত্য কলহের জেরে এসব চাকরিজীবী নারী খুব সহজেই স্বামীকে তালাক দিয়ে দিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর